বঙ্গীয় বীপ, অসামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন এবং পরিকল্পিত দুর্যোগ

http://103.123.8.54:8069/web/image/product.template/87/image_1920?unique=5a679b4

50.00 ৳ 50.0 BDT 50.00 ৳

50.00 ৳

Not Available For Sale

This combination does not exist.

দুটো উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু করি; একটি খোদ ইবনে খালদুনেরই, অন্যটি পত্রিকার বরাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের। ১৯৮১ সালে রিগান সাহেব ‘সাপ্লাই সাইড ইকনমিক্স’- এর তত্ত্ব উপস্থাপনকালে ইবনে খালদুনকে কেবল স্মরণই করেন নি, বরং তার তত্ত্বের স্বপক্ষেও খালদুনকে হাজির করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর শিরোনাম, ‘রিগান ইসলামিক পণ্ডিতকে উদ্ধৃত করেছেন’, দেখেই আন্দাজ করা যাচ্ছে পশ্চিমা মিডিয়া খুব গুরুত্বসহকারে খালদুনকে উদ্ধৃত করার ঘটনাটা প্রকাশ করেছিল। আবার, প্রথমেই খালদুনের যে উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে সেটার ব্যবহার আমরা বাংলাদেশের প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী ও গবেষক নুরুল কবীরের সাম্প্রতিক (২০২০)  বইতে দেখতে পাই। তিনি ইবনে খালদুনের এই উদ্ধৃতি ও হাওয়ার্ড জিনের একটা উদ্ধৃতি দিয়ে উনষত্ত্বরের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস লেখা শুরু করেন। পাঠকমাত্রই খেয়াল করবেন, রিগান সাহেবের নিওলিবারেলিজম বা নয়া-উদারনীতিবাদের অন্যতম হুজুর হিসাবে খ্যাতি রয়েছে, অন্যদিকে নুরুল কবীর বামপন্থি ও এন্টি-এস্টাবলিশমেন্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচত। কিন্তু, বিপরীতধর্মী দুজন ব্যক্তিত্ব ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তাদের গবেষণা ও তত্ত্বের শুরুতেই নাম নিচ্ছেন একই ব্যক্তির; আবার একজন নিচ্ছেন অর্থনীতির সাথে জড়িয়ে, অন্যজন নিচ্ছেন ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে। ইবনে খালদুনের চিন্তা, কাজ ও প্রভাবের বিচিত্র গতিপথ সম্পর্কে কিছুটা আন্দাজ এতেই পাওয়া যায়। একজন খালদুন বিশেষজ্ঞ তো বলেই ফেলেন, ইবনে খালদুন যে একেকজনের কাছে একেকরকম ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হন এটা আসলে যেমন তাঁর মহত্বের পরিমাপক, তেমনি তাঁর দ্ব্যর্থতা বা অস্পষ্টতারও পরিমাপক।

পশ্চিমা একাডেমিয়াতে বিভিন্ন কারণেই ইবনে খালদুন ব্যাপক চর্চিত হয়েছেন; অরিয়েন্টালিস্ট বা প্রাচ্যবাদী চর্চার সাথে ইবনে খালদুনের নাম এতো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে যে খালদুন গবেষক রবার্ট আরউইন তার বইয়ের ভূমিকায় মন্তব্য করেন, কেউ যদি উনিশ শতকের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ইউরোপের জ্ঞানজগতে কেবল খালদুনের উপর জিনিসপাতি তালাশ করেন, তাহলে তিনি অরিয়েন্টালিজম বা প্রাচ্যবাদের অর্ধেক ইতিহাসই জেনে যাবেন।

ইউরোপের একেকস্থানে তাকে একেকরকম ভাবে পাঠ করা হয়েছে। যেমন, দীর্ঘদিন ধরে ইবনে খালদুনের উপর বেশিরভাগ কাজ ফরাসিরাই করেছিলেন, তার কারণও স্পষ্ট : উপনিবেশায়ন। উপনিবেশের অংশ হিসাবে ফ্রান্সে ইবনে খালদুনকে চর্চার প্রায় একটা হিড়িক পড়েছিল। অনুবাদ প্রক্রিয়ার হাত ধরে ইবনে খালদুনের বয়ানকে ফরাসি উপনিবেশকরা নিজেদের ঔপনিবেশিক বায়নের মধ্যে আত্তীকৃত করেছিলেন। একাডেমিয়ার জগতের অনেকেই দাবি করেছিলেন, খালদুন প্রাচ্যবাদের ফসল ছিলেন, এবং তাঁর প্রতি প্রাচ্যবাদীদের যে আগ্রহ ছিল তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাকে কতটা মূল্যায়ন করা যাবে সেটাও নিশ্চিত না। অবশ্যই, উপনিবেশিত জনগণের ইতিহাস-আচার-আচরণ জানা ও শাসন উপযুক্ত নয়া বয়ান তৈরির জন্য উপনিবেশকের যে তাগিদ তাতে ইবনে খালদুন ও তাঁর টেক্সট খুব গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হাজির করেছিল।

অন্যদিকে উপনিবেশায়নের কারণে ফ্রান্সে যে তরিকায় খালদুন ব্যবহৃত হয়েছেন সেভাবে জার্মান, ইংল্যান্ড বা আমেরিকাতে ঘটেনি; কিন্তু ফরাসী ভাষাতেই খালদুন বেশ আগ থেকে এবং ব্যাপকভাবে চর্চিত হওয়ার কারণে বাদবাকীরাও ফরাসী পাঠ দ্বারা কমবেশি প্রভাবিত ছিলেন। পোলিশ সমাজবিজ্ঞানী লুডভিগ গুমপ্লোভিচ এবং জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ফ্রাঞ্জ অপেনহেইমার খালদুনকে সমাজতাত্ত্বিক হিসাবে পাঠ করেছিলেন। বহু পশ্চিমা পণ্ডিতই খালদুনকে সমাজবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। সমাজবিজ্ঞানী আর্নেস্ট গেলনার মুকাদ্দিমায় প্রস্তাবিত তাত্ত্বিক মডেলের সাথে বিভিন্ন পশ্চিমা দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানীর চিন্তার যোগসূত্র তৈরি করেন। আবার ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ আর্নল্ড টয়েনবি খালদুনের উচ্চকিত প্রশংসা করতেন। তিনি যখন অ্যা স্টাডি অফ হিস্টোরি-তে বিভিন্ন সভ্যতার উত্থান পতনের কারণ তালাশ করছিলেন, তখন তিনি এই সিলসিলার পূর্বসূরীদের খোঁজ করছিলেন, যারা কিনা তাকে তার উচ্চবিলাসী প্রকল্পের বৈধতা দিতে পারেন। খালদুন ও মুকাদ্দিমা খুঁজে পেয়ে টয়েনবি পুলকিত হয়েছিলেন। 

দেখা যাচ্ছে বিভিন্নজনের হাতে খালদুন বিভিন্ন চেহারায় হাজির হচ্ছেন। কেউ কেউ খালদুনের সেকুলার চিন্তা ও ইতিহাসের আধুনিক ধারণার উপর জোরারোপ করেছেন। কেউ  খালদুনকে ইসলামি পরিপ্রেক্ষিতে হাজির করার চেষ্টা করেছেন, সেক্ষেত্রে খালদুনের বিশ্বাস, ফকিহ হিসাবের তার পরিচয়ের উপর জোর দিয়েছেন; কেউবা ইবনে খালদুনের উপর প্রাচীন গ্রিক দর্শনের প্রভাবের উপর জোর দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ খালদুনের সাথে ইউরোপীয় চিন্তার ফারাকটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। খালদুনের দিকে জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিতেও তাকানো হয়েছে, আরবের হারানো ঐতিহ্য উদ্ধারে তাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন। এই প্রতিটি চিন্তাস্কুলেরই সঙ্কট ও সম্ভাবনা নিয়েও আলাপ বিদ্যমান। আবার, বর্তমান সময়ে কোনো গবেষক সমাজবিজ্ঞানের ইউরোসেন্ট্রিক ধারার সঙ্কট চিহ্নিত করে এর বিপরীতে সমাজবিজ্ঞানের খালদুনিয়ান ধারা তৈরির প্রস্তাবও করেন।  রাজনৈতিক বিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী, দার্শনিক, এথনোলজিস্ট এবং অর্থনীতিবিদ সবার মধ্যেই তারা যা চর্চা করেন তার বুদ্ধিবৃত্তিক পূর্বসূরী বা পূর্বপুরুষ  খোঁজার তাগিদ লক্ষ্য করা যায়।

এই প্রবন্ধে খুব সংক্ষেপে ইবনে খালদুনের সমাজ ও রাষ্ট্রভাবনার মূলসূত্র তুলে ধরা হবে। আমরা আধুনিক অর্থে যেভাবে রাষ্ট্রকে বুঝে থাকি, নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিকভাবেই সেটা খালদুনের আমলের চাইতে ভিন্ন। ইসলামি চিন্তা ঐতিহ্যে বা খালদুনের লেখালেখিতে যাকে ফধষিধয বা রাজ্য বা ডাইনেস্টি বলা হয়েছে তাকে আমরা রাষ্ট্র – অর্থাৎ, এমন এক রাজনৈতিক সংগঠন যার মাধ্যমে বিভিন্ন গোত্র জনগোষ্ঠীর ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করে – হিসেবে পাঠ করতে পারি। ইবনে খালদুনের সে সংক্রান্ত বিশ্লেষণকেই আজকে আমরা রাষ্ট্রভাবনা হিসেবে পাঠ করবো। অন্যদিকে রাষ্ট্র ও সমাজকে আলাদা করে পাঠ করার যে রেওয়াজ আছে, সেটাও খালদুনের জমানায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই দুটোকে বিবেচনায় নিয়েই আমরা খালদুনের সমাজ ও রাষ্ট্রভাবনা হাজির করবো।

এক নজরে খালদুন

ইবনে খালদুন ১৩৩২ সালে আফ্রিকার তিউনিসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৩৪৮ সালে উত্তর আফ্রিকায় ভয়াবহ প্লেগ মহামারি শুরু হলে তিনি পিতা, ভাই সব বহু বন্ধুবান্ধবদের হারান। এই মহামারি ও ধ্বংসস্তুপ ইবনে খালদুনের মনে স্থায়ী জায়গা করে নেয়, যার প্রভাব বিভিন্ন ভাবে তার কাজে-কামে-তত্ত্বে ছড়িয়ে পড়ে। খালদুন তার জীবনে তৎকালীন বিভিন্ন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন। তৎকালীন বাস্তবতায় বলা যায়, তিনি সবসময় নিজের জান হাতে করে কাজ করে গিয়েছেন। উত্তর আফ্রিকায় সিংহাসন নিয়ে যে লড়াই সেখানে খালদুন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে নিজেকে হাজির করেছিলেন। তার এই রোমাঞ্চকর জীবন থেকে কিছুদিন বিরাম নিয়ে ১৩৭৫ সালে পশ্চিম আলজেরিয়ার ক্বালাত বানু সালামে বিখ্যাত মুকাদ্দিমা গ্রন্থ লেখা শুরু করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক উত্থান পতনের শিকার হয়ে  ১৩৮৩ সালে মিসরের কায়রো গমন করেন। সেখানেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৪০৬ সালে খালদুন ইন্তেকাল করেন। 


See More..

Terms and Conditions
30-day money-back guarantee
Shipping: 2-3 Business Days


Book Info

Button

সম্প্রতি দেখা হয়েছে

Your Dynamic Snippet will be displayed here... This message is displayed because you did not provided both a filter and a template to use.